JuboKantho24 Logo

ইসলামে খলিফা নির্বাচন পদ্ধতি; মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক

আহলুল হল ওয়াল আকদ

খেলাফতের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর নির্বাচন প্রক্রিয়া। খেলাফতের নির্বাচন প্রক্রিয়া রাজতন্ত্রের বংশধারার মতো নয়। স্বৈরতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্রের মতো সামরিক শক্তির ওপরও নির্ভরশীল নয়। আবার গণতন্ত্রের মতো শিক্ষিত, মূর্খ, যোগ্য-অযোগ্য বাচ-বিচারহীন সকলের ভোট দানের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মতো নয়; বরং ইসলামে খলীফা নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের উপর। তাদেরকে আহলুল হল ওয়াল আকদ বলা হয়। খলীফা নির্বাচনের গুরুদায়িত্ব পালনে যোগ্য ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে গঠিত হবে একটি সংসদ। এই সংসদের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন খলীফা। নিম্নে আহলুল হল ওয়াল আকদ তথা খলীফা নির্বাচনকারী সংসদ সদস্যদের শর্ত ও গুণাবলী আলোচনা করা হলো।

 

আহলুল হল ওয়াল আকদ বা সংসদ সদস্যদের গুণাবলী

আহলুল হল ওয়াল আকদের মধ্যে পরিগণিত হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তাবলী অপরিহার্য-

১. মুসলমান হওয়া

২. পুরুষ হওয়া

৩. স্বাধীন হওয়া

৪. আদেল হওয়া অর্থাৎ শরীয়তের দৃষ্টিতে ন্যায়পরায়ন ও নির্ভরযোগ্য হওয়ার জন্য যে সকল বৈশিষ্ট্য অপরিহার্য সে সকল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়া।

৫. আলেম হওয়া তথা উপযুক্ত খলিফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে ইলমের প্রয়োজন সেই ইলমের অধিকারী হওয়া।

৬. সুচিন্তিত মতামত ও সিদ্ধান্তের অধিকারী হওয়া।

উপরোক্ত গুণ ও বৈশিষ্ট্যবলী একজন ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকলেই কেবল সে খলিফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোট তথা রায় প্রদানের অধিকার রাখে।

 

খলীফা নির্বাচনের যোগ্যতাসম্পন্ন ‘আহলুল হল ওয়াল আকদ’ ব্যক্তিবর্গই নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে এ বিষয়টি ইসলামী শরীয়তের আলোকে চূড়ান্ত। তবে এ সকল ‘আহলুল হল ওয়াল আকদ’ ব্যক্তিবর্গ কীভাবে তাদের রায় দেবে কিংবা কতজনের রায়ে খলীফা নির্বাচিত হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রক্রিয়া বা সংখ্যা শরীয়তের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা হয়নি। ইসলাম এ বিষয়ে দুটি মৌলিক নীতি বাতলে দিয়েছে, যার আলোকে খলীফা নির্বাচন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে তারা ভূমিকা পালন করবে এবং তা কার্যকর হবে।

মৌলিক নীতি দুটি হলো এই-

এক. সকল আহলুল হল ওয়াল আকদ-এর সর্বসম্মতিক্রমে ও ঐক্যমতেই খলীফা নির্বাচন করতে হবে, দু চারজন বিরোধিতা করলে খলীফা নির্বাচিত হবে না বিষয়টি এমন নয়। আবার বিষয়টি এমনও নয় যে, দু চারজন আহলুল হল ওয়াল আকদের রায়েই খলীফা নির্বাচিত হয়ে যাবে। বরং খলীফা নির্বাচনের পদ্ধতি হল এতদুভয়ের মাঝামাঝি। অর্থাৎ এই পরিমাণ আহলুল হল ওয়াল আকদের রায়ে খলীফা নির্বাচন সম্পন্ন হবে যাদের অনুসারী সাহায্যকারী লোকবলের মাধ্যমে এতোটুকু শক্তি অর্জিত হয় যে, বিরোধিতাকারী কোনো পক্ষ এদেরকে নির্মূল করে দিতে পারবে এমন আশঙ্কা হয় না। সংখ্যায় এই পরিমাণ আহলুল হল ওয়ালা আকদ যখন খলীফা নির্বাচনের বিষয়ে রায় দিবে এবং বায়আত গ্রহণ করবে, তখন খলীফা নির্বাচিত হবেন এবং তার আনুগত্য করা মুসলমানদের জন্য ফরজ হবে।

 

দুই. আহলুল হল ওয়াল আকদ ব্যক্তিবর্গ পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে খলীফা নির্বাচন করবে ব্যক্তি বিশেষ নিজ ইচ্ছামতো খলীফা নির্বাচন করবে না।

 

খেলাফতের ইতিহাস বিশেষত খোলাফায়ে রাশেদিনের আমল এবং ইমাম ও ফকিহগনের বক্তব্যের আলোকে  খলীফা নির্বাচন ও আহলুল ওয়াল আকদের বিষয়ে উপরোক্ত নীতিদ্বয় চূড়ান্ত। তবে আহালুল হল ওয়াল আকদ ব্যক্তিবর্গের দ্বারা কোনো সংসদ গঠন করা যাবে কি না, করা গেলে সেই সংসদের সদস্য কত হবে,  সেই সদস্যদের নির্বাচন প্রক্রিয়া কী হবে? এ সকল বিষয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু চূড়ান্ত নেই। এগুলো সদস্যদের ইজতিহাদী বিষয়। শরীয়তের মূলনীতি ঠিক রেখে সমকালীন উলামায়ে উম্মত পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে যেটা উপযুক্ত বিবেচনা করবেন সেটা গ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই।

 

আধুনিক কালে খলীফা নির্বাচনের প্রক্রিয়া যা হতে পারে

খেলাফত যেহেতু মুসলিম উম্মাহর কেন্দ্রীয় এবং একক নেতৃত্ব তাই খলীফা নির্বাচনের প্রক্রিয়া এমন হতে পারে, আহলুল হল ওয়াল আকদ হওয়ার  যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের  ভোটের মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক অথবা আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ হবেন সেই সংসদের সদস্য যে সংসদ খলীফা নির্বাচন করবে। কয়েক স্তর বিশিষ্ট সংসদও হতে পারে। এই সংসদগুলো পর্যায়ক্রমে স্তর হিসেবে খলীফা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং খলীফার পরামর্শদাতা ও খলীফার প্রশাসন পরিচালনার সহযোগী হবে।

 

এই প্রক্রিয়ার বিষয়টি বাহ্যত গণতান্ত্রিক সংসদীয় পদ্ধতির সাথে কিছুটা মিল মনে হলেও ইসলামী খেলাফত নির্বাচনের প্রক্রিয়া তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর সেই মৌলিক তিন বৈশিষ্ট্য হলো-

১. যাদের মধ্যে আহলুল হল ওয়াল আকদ হওয়ার যোগ্যতা আছে এমন লোকই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারবে।

২. আহলুল হল ওয়াল আকদের রায়ে নির্বাচিত হবে খলীফা।

৩. আহলুল হল ওয়াল আকদ বা সংসদ সদস্যগণ এমন কাউকে খলীফা নির্বাচন করতে পারবে যার মধ্যে খলীফা হওয়ার যাবতীয় শর্ত ও বৈশিষ্ট্যাবলী বিদ্যমান।

Jubokantho24 Ad
এ জাতীয় আরো সংবাদ
এ জাতীয় আরো সংবাদ