সম্প্রতি কওমি মাদরাসার নিরীহ ছাত্রদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে জঙ্গি হিসেবে মিডিয়ায় উপস্থাপনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমান।
আজ (০১ জুলাই) সোমবার, গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে
নেতৃদ্বয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে- গত বুধবার
ঢাকার সাইনবোর্ড থেকে হাতের লেখা প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে কুমিল্লা থেকে জামিয়া পটিয়ার ছাত্র উজায়ের ও হামিমকে এবং লক্ষ্মীপুর থেকে নেয়ামতুল্লাহকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। নিরীহ এই ছাত্রদের গ্রেফতারের তিন দিন পর তাদেরকে কক্সবাজারে জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে তাদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
হেফাজত নেতৃদ্বয় বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল মহল থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে যে, জঙ্গিবাদের সাথে মাদরাসা শিক্ষার দূরতম সম্পর্কও নেই। একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘কেউ কেউ বলবেন মাদ্রাসা হচ্ছে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির কারখানা। কিন্তু আমি এটার সঙ্গে একমত নই। হোলি আর্টিজানে জড়িতরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা। উচ্চশিক্ষিত পরিবার ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল একাধিক বার বলেছেলেন, ' মাদ্রাসার সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গি নয়। জঙ্গি হতে পারে না।' তিনি ২০২৩ সালে হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শনে গিয়ে বলেছিলেন, কওমি মাদ্রাসা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেখানে ইসলাম শিক্ষা দেয়া হয়। এখান থেকে কখনো জঙ্গি উত্থান হয়নি, হতেও পারেনা।' ২০২৪ সালে ঢাকায় এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, 'আমরা যত জঙ্গি ধরেছি, তার মধ্যে একজনও মাদরাসার ছাত্র নন।'
নেতৃদ্বয় বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল মহল থেকে বারংবার এরকম বক্তব্যের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কওমী মাদরাসার ছাত্রদের টার্গেট করে জঙ্গিবাদের তকমা লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে গিয়ে,কয়েদিন গুম রেখে পরে জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত বলে কল্পিত অভিযোগ দিয়ে গ্রেফতার নাটক সাজিয়ে দেশ বিদেশে মাদ্রাসা ছাত্রদের সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণ করতে এরা উঠেপড়ে লেগেছে। যা কওমী মাদ্রাসা ও আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার দুজনসহ গ্রেফতারকৃত তিন ছাত্রকে কোন অপরাধে জঙ্গি বানানো হলো তা জাতি জানতে চায়?
হেফাজত আমীর ও মহাসচিব প্রশাসনের উদ্দেশ্য বলেন, এসব জঙ্গি নাটক অবিলম্বে বন্ধ করুন। নিরীহ মাদরাসা ছাত্রদের টার্গেট করবেন না। দুর্বলের সঙ্গে জোর দেখিয়ে কাপুরুষতার পরিচয় দেবেন না। দেশের সাধারণ নিরীহ আলেম সমাজ ও মাদ্রাসা ছাত্র এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর জুলুম করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবেন না।
হেফাজত নেতৃদ্বয় বলেন, জঙ্গি ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করে পশ্চিমাদের আগের মতো বোকা বানানো যাবে না। মিথ্যা নাটকের কারণে স্যাংশন খেয়ে দেশের ভাবমর্যাদা আগেই ধুলায় লুটিয়ে দেয়া হয়েছে। তবুও এখন জঙ্গি নাটক করা হচ্ছে কওমি মাদরাসা ধ্বংস করার এজেন্ডা বাস্তবায়নের স্বার্থে।
তারা বলেন, আমরা দেশে শান্তিতে থাকতে চাই, আলেম ওলামা ও ছাত্রজনতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে, গ্রেফতার ও হয়রানি করে সরকারের সাথে সংঘাত তৈরি করবেন না। এসব অন্যায় কর্মতৎপরতা বন্ধ করা না হলে দেশের আপামর তৌহিদী জনতা কখনোই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না।