৫ আগষ্ট ২০২৪ স্বৈরাচারীর পতনের পর কি হয়েছিল রাহমানিয়া ভবন নিয়ে? মাহফুজ সাহেবের ছাত্ররা কিভাবে ভবন পুরুদ্ধার করেছিল? সন্ত্রাসী দিয়ে? দেশি-বিদেশী অস্ত্র দিয়ে? প্রতিপক্ষকে কি পিটিয়ে বের করেছিল ভবন থেকে?
উপর উল্লেখিত প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হচ্ছে মানুষের মুখে মুখে, অনলাইনের পাড়ায় পাড়ায়। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন শায়খুল হাদীস পরিবার এবং আজিজিয়ার শিক্ষার্থী, ফুজালাবৃন্দ। এর কারণ হিসেবে দেখতে পাচ্ছি প্রতিপক্ষের জঘন্য অপপ্রচার ও মিথ্যাচার। রাবেতায়ে রাহমানিয়া কর্তৃক বিতরণকৃত রাহমানিয়ার ঘটনা প্রবাহ নিয়ে প্রকাশিত মিথ্যাই টয়টম্বুর একটি লিফলেট। ছয় পৃষ্ঠার এই কাগজগুলোতে কীরূপ মিথ্যাচার করা হয়েছে, তার পাঁচ, আট, চব্বিশ এর বিবরণ টা উল্লেখ করে সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এই মিথ্যা প্রচারণার জবাব দিলে বুঝতে পারবেন!
মিথ্যাচার —১
❝দেশীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় শাইখুল হাদিস আজিজুল হক রহমাতুল্লাহি আলাইহির ছোট ছেলে মাসরুর এবং মাওলানা মামুনুল হক সাহেবের বড় ছেলে যিমামুল হকের নেতৃত্বে একটা দল মাদ্রাসার গেটের তালা ভেঙ্গে সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে মুরব্বিদের মারার হুমকি দিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রহমানিয়া পুনরায় দখল করে নেয়।❞
জবাব—১
দেশীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বলতে ছাত্রদের বোঝানো হচ্ছে! কারণ ছাত্রদেরকে তাদের সন্ত্রাসী বলা এটা নতুন নয়। মামুন সাহেবের ছাত্রদেরকে জ ঙ্গি বলে তারা একসময় ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছেও নালিশ করে। এই ইতিহাস আপনাদের জানা। ৫ ই আগস্ট ২০২৪ এর ঘটনাটা বলি আবার,
সেদিন আমরা সকাল থেকে প্রতিদিনের মতো মোহাম্মদপুরের রাজপথে ছিলাম। বেলা দুইটায় যখন ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়ে তখন আমরা কর্ম নির্ধারকদের আদেশে শাহবাগের দিকে ছুটে যাই। সেখান থেকে আওয়াজ পাই গণভবন ঘেরাও হচ্ছে সেদিকে যেতে হবে। এরপর গণভবন গিয়ে ফেরার পথে আজিজিয়া ছাত্ররা একসাথে জড়ো হয়। ফুজালা এবং ছাত্রকাফেলার আমিরদের সিদ্ধান্ত হয়, সকল ছাত্রকে ভবনে থাকতে হবে বাদ আসর। আমরা ঠিক সময়ে রাহমানিয়া ভবনে হাজির হই। এরপর গেটম্যানকে গেট খোলার বারবার আহবান করার পরও সে অসম্মতি জানালে আমরা গেটের তালা ভাঙতে বাধ্য হই। এরপর শান্তশিষ্টভাবে ভেতরে প্রবেশ করে প্রতি রুমে রুমে গিয়ে এলান করতে থাকি ” আপনারা বের হয়ে যান কিছুক্ষণের মধ্যে। সে সময় তাদের ছাত্ররা নানান কথা বলতে থাকে। আমরা তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেই আমরা আপনাদের সাথে কোনো ঝামেলা করব না। আল্লাহ ওয়াস্তে দ্রুত বের হয়ে যান।
তারা গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় হট্টগোল করতে নানান কথা বলতে থাকে। আমরা কোনো প্রতি উত্তর না দিয়ে তা এড়িয়ে যাই। কারণ আমরা তো পূর্বেই ঘোষণা দিয়েই দিয়েছি।
তাদের আসাতেযায়ে কেরামকে মারার হুমকি তো দূরের কথা তাদের সাথে কোনো টু শব্দও করা হয়নি। আরেকটা বিষয় হলো আমাদের এ নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। এমনকি মাহফুজ সাহেবের সাথেও এ বিষয়ে কথা হয়নি বলে জেনেছি। ছাত্ররা এবং ফুজালারা কথা বলে ভবন পুনরুদ্ধারের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়।
মিথ্যাচার—২
❝যিমামুল হক হযরত মমিনপুরী হুজুরকে ইঙ্গিত করে দালাল বলে চিৎকার করে এবং বলে এই বুড়ারে তাড়াতাড়ি বের কর ❞
জবাব—২
এত জঘন্য অপরাধ আলেম হয়ে একে অন্যকে কিভাবে দেয়, তা আমার অন্তত বুঝে আসেনা। সেদিন যিমামুল হকের কাছাকাছি আমরা ছিলাম। তার মুখ থেকে এমন কোন কটুকথা উচ্চারণ হয়নি। আর যিমাম সম্পর্কে আপনারা পরিচিতরা জানেন। সে ভদ্র এবং নম্র স্বভাবের অধিকারী। তার উপর অপবাদ আরোপ করা মানে মামুন সাহেবের উপর উপর অপবাদ আরোপ করা।
এই বুড়াকে তাড়াতাড়ি বের কর, কথাটি অন্য এক জায়গার ছাত্র বলে আওয়াজ করেছিল। আমরা তার যথেষ্ট প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু এর দায়ভার কেন যিমামের উপর দেওয়া হবে? আর তার নামেই কেন দোষ আরোপ করা হবে!
মিথ্যাচার —৩
❝তাদের আরেক ছাত্র জামিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা কারী মুনিরুজ্জামান সাহেবের মোবাইল কেড়ে নিতে চায় ❞
জবাব —৩
অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পল্টি মারতে চেয়ে ধরা খেয়ে গেলেন আপনারা। আপনাদের লজ্জা না লাগলেও আমাদের লাগে! ঘটনাটা হলো ঐদিন ওই সময়, তাদের এক ছাত্র ভিডিও ছবি তুলতে থাকে, আমরা তাকে বারবার বারণ করার পরেও সে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি। এরপর আমরা তার মোবাইল হাতে নিয়ে ভিডিও কাটতে বাধ্য হই। ঘটনা ক্রমে পরে আমরা জানতে পারি তার বাবা মাওলানা মনিরুজ্জামান। আর এই লিফলেটে বলা হলো কী!আমরা নাকি হুজুরের মোবাইল কেড়ে নিতে চেয়েছি!
কোনো মুহাদ্দিস কী কোনো সাধারণ শিক্ষক শিক্ষার্থীর সাথেও আমরা বেয়াদবি মূলক আচরণ বা কথা বলিনি।
এখন তো তাদের ভদ্র আদাবওয়ালা শিক্ষার্থীদের কথা বলতে হয়! আজিজিয়ার জনৈক ওস্তাদের সাথে হযরতদের এক সোনার ছাত্র বিতন্ডা করতে এসে হুজুরের গায়ে হাত তুলে বসে। এরপর ছাত্ররা তাকে গণধোলাই করতে শুরু করলে হুজুর তাকে ফিরিয়ে রাস্তায় তুলে দেন। এখন কি আপনার মনে হয়, সেই চরম অভদ্রের গায়ে হাত তোলাতে ছাত্ররা বড় ধরনের অপরাধ করেছে? প্রশ্নটা বিবেকের কাছে থাক!
মিথ্যাচার —৪
❝তাদের উশৃংখল ছাত্ররা এ জামিয়ার ছাত্রদেরকে কিলঘুষি ও হেনস্তার মাধ্যমে বের করে দিতে থাকে। মুরব্বিদের নামে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ❞
জবাব—৪
বিষয়টা উপরে পরিষ্কার করেছি এখানে বলার প্রয়োজন মনে করি না। আগের তো আমরা প্রথমেই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি, আমরা আপনাদের সাথে কোনো ঝামেলা করব না। তারপরেও বলি,
বিকালে তাদের সব ছাত্র বের হয়ে যাওয়ার পর, বাদ মাগরিব তাদের কিছু ছাত্র মসজিদের সামনে এসে হট্টগোল সৃষ্টি করতে চায়, এরপর আমাদেরও কিছু ছাত্র তাদের সামনে এগিয়ে যায়। হাতাহাতির আশঙ্কা দেখা মাত্রই, আমাদের দাওরার বড় ভাইয়েরা দুই দলকে ফিরিয়ে পাঠিয়ে দেয়।এবং তাদেরকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করে। আর কোনো ওস্তাদের সাথে যে, কোনরূপ অসাধু আচরণ করা হয়নি তা আমি আগেই স্পষ্ট করেছি।
আজিজিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ছি। কিন্তু কোনদিন ধরেছে কোন উস্তাদের মুখে প্রতিপক্ষের নামে কোন কটুবাক্য এমন কি গল্পও শুনিনি। আর হযরত ওয়ালারা আমাদের ব্যাপারে তাদের ছাত্রদেরকে নিয়মিত তালিম দেন কিনা তা আপনারা তাদের ছাত্জিরদেরই জিজ্ঞেস করতে পারেন!
মিথ্যাচার—৫
❝প্রথম হামলাকারী দল ব্যর্থ হলে, অস্ত্রধারী বিহারী সন্ত্রাসীরা ময়ূর ভিলার পাশে পাবলিক টয়লেটের কাছে প্রস্তুত ছিল। এক বিহারী তো বলেই বসে –হামে দখল কারনে কে লিয়ে লায়া গায়া। জারিজুরি ফা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাদের আরেক ছাত্র সেই বিহারীর মুখ চেপে ধরে। ❞
জবাব —৫
এমন মিথ্যা কথা হয়তো ওবায়দুল কাদেরও কোনদিন বলেননি। অবাক হওয়ার কারণ নেই কারণ হযরত ওয়ালারা তো তাদেরই মদদপুষ্ট ছিলেন! দুঃখিত! তা তো আপনারা জানেনই।
ধরলাম তাদের কথা অনুযায়ী আমরা হামলাকারী ছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হবার তো কোনো প্রশ্নই আসে না! হাস্যকর আমরা কি দুই দলে এসেছিলাম? এটাতো নাটকও হলো না সিনেমাও না! বিহারী কে নিয়ে যে ঢাহা মিথ্যা কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও বানোয়াট।
যেহেতু বিহারীদের কথা এসেছে, তাহলে বলেই ফেলি, জানা যায়, হযরতওয়ালারা ময়ূর ভিলার পাশে একটি বোডিং দখল করে রেখেছিল। মেইন রোডের পাশে যে বোর্ডিংটি ছিল। তা নিয়ে নাকি বিহারীদের সাথেও দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। এরপর স্বৈরশাসকের পতনের পর যেহেতু সবাই স্বাধীন হলো, হয়তো সেই সাহসেই বিহারীরা তা দখল করতে এসেছিল। আর বিহারীরা ছিল আমাদের থেকে 100 গজ দূরে। বিহারীদের সাথে আমাদের কোন কথা হয়নি। নিয়ে এসেছি তো দূরের কথা! এমনকি আমরা তাদেরকে ওই সময় দেখেও নি। এরপর এই অপপ্রচারের কারণে আমরা বিহারীদের ব্যাপারে জানতে বাধ্য হই।
আর এখানে যে বলা হলো,এক বিহারী বলেই বসেছে ‘হামে দখল কারনে কে লিয়ে লায়া গায়া’
আচ্ছা বিহারীদের যদি আমরা নিয়েও আসতাম, তাহলে কি সে এই কথা বলতো? এটাতো চরম হাস্যরসের বিষয়! বানোয়াট কথারও তো একটা সাইজ আছে ! বেসাইজের কথা কি মানুষ খাবে?
মিথ্যাচার—৬
❝সে রাতেই মাওলানা মামুনুল হক সাহেব এসে রাহমানিয়া ভবনের চতুর্দিকে এমনকি ময়ূর ভেলার সামনেও নিজ তদারকিতে পাহারার ব্যবস্থা করেন যাতে দখল ছুটে না যায় ❞
জবাব—৬
মামুন সাহেবের উপর যে দুইদিন পর পর অপবাদ এসে অপবাদদাতা এবং অপবাদ নিজেই লাঞ্চিত হয়, তা কি তাদের চোখে পড়েনি? চোখ না থাকলে আর কি বলবো!
“সূর্য যে রোজ আলো ছড়ায়
দেখছে চারিধার,
কলাবাদুর দেখার লাগি
কী বা আসে কার!”
তারপরও স্পষ্ট করি বিষয়টা, সেদিন রাত ১১ঃ২৮ মিনিটে মামুন সাহেব মাদ্রাসায় প্রবেশ করেন। গেটে ছাত্রদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তিনি বলেন, এই তোমরা চলে যাও,এখন আর পাহারা দেওয়ার দরকার কী! রাতে তাহাজ্জুদ পইড়ো তাইলেই হবে!
এই পর্যন্তই বলে মামুন সাহেব চলে যান।
এই ছিল মোটাদাগে কয়েকটি মিথ্যাচারের চিত্র! এটা ছিল ৬ পৃষ্ঠার কাগজগুলোর মাত্র আধা পৃষ্ঠার মিথ্যাচারের অংশ। আমি যা স্বচক্ষে দেখেছি তাই বর্ণনা করেছি। বাকী ইতিহাসকে কত ঘৃণ্যভাবে উপস্থাপন করছে তারা,তা বড়দের থেকে জেনে নিবেন বলে আশাবাদী! জাযাকাল্লাহ।
—মুহাম্মাদুল্লাহ্
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আজিজিয়া শিক্ষার্থী..